Tripura election 2018
বলতে বলতে ত্রিপুরার 2018 এর নির্বাচন মানুষের দরজায় এসেগেল। 2013 এর নির্বাচনের আগে কিছু রাজনীতিক এর সঙ্গে কথা বলতে বলতে এটা বলেছিলাম যে যদি 2013 এ কংগ্রেস ত্রিপুরায় আসতে না পারে তাহলে ত্রিপুরায় কংগ্রেস তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলবে ,আমি ওটা একটা সম্ভাবনা বলেছিলাম কিন্তু 2017 আসতে আসতে যে আমার সেই কথা তা বাস্তবে ফলে যাবে সেটা ভাবতে পারি নি ।
2007 এর পথ চলার মাঝখানে 2008 এর নির্বাচন আসার আগের এক ছোট্ট নির্বাচনী সভায় জানতে পেরেছিলাম যে ত্রিপুরার বিরোধী নেতা দের সমস্যা হলো তারা মানুষের সমস্যা ব্যক্ত করতে পারতো না , অযথা চিৎকার করে ভাষণ দিলেই মানুষের মন জয় করা যায় না । মানুষের বোঝার মতো আর তাদের রোজকার সমস্যা কে তোলে ধরে সেটাকে যুক্তি সংগত ভাবে সমাধান করতে পারলেই এবং সেই সমাধান কে মানুষের সামনে বোধগম্য ভাষায় ব্যক্ত করতে পারলেই মানুষ সেই ব্যক্তি কে বিশ্বাস ও নিজেদের একজন প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরবে । আমার মনেহয়েছিল সেই গুরুতর সমস্যায় ভুগছিল কংগ্রেস ও তাদের জন্য প্রতিনিধিরা যার ফল সরূপ মানুষ চাইলেও কংগ্রেস এর প্রতিনিধি দেরকে নিজের প্রতিনিধি হিসেবে ধরে নিতে পারছিলনা ।

কংগ্রেস কেডার ভিত্তিক রাজনীতিক দল নয় তাই তাদের CPM এর মত শক্ত কেডার ভিত্তিক রাজনীতিক দলের সঙ্গে পেরে উঠা তাদের পক্ষ্যে সম্ভব হচ্ছিলনা , তাছাড়া কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস এর সঙ্গে CPM এর সখ্যতা তার অন্য কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ।
2014 এর পর যখন বিজেপি এলো, তারা কিন্তু ত্রিপুরাকে কংগ্রেস এর মত হেলায় ছেড়ে দেয়নি, তার প্রমান মিলে যখন বিজেপি সুনীল দেওধর কে ত্রিপুরার প্রভারি হিসাবে ত্রিপুরায় পাঠানো হয় , আর সুনীল দেওধর ত্রিপুরার একনাগাড়ে বাসাবেঁধে গত 4 টা বছর থেকে যাওয়া এই থেকেই বুঝায় যে বিজেপি ত্রিপুরাকে কতটুকু গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে শুরু করেদিয়েছিল সেই প্রথম থেকেই ।
ত্রিপুরার রাজনীতি বড় অদ্ভুত ছিল। 1993 যে কংগ্রেস কে ভেঙে 2 থেকে 3 তা পার্টি আর কংগ্রেসও তার প্রথম ও দ্বিতীয় সারির নেতা দের নির্দল প্রার্থী বানিয়ে কংগ্রেস এর ভোট কাটার রাজনীতি করে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে বামবিরোধী ভোটকে ভেঙে বামদের ক্ষমতায় আনাহয়েছিলো যাতে বামরা কেন্দ্রে কংগ্রেস কে সমর্থম করে নারসীমা রাওএর সরকার কে ক্ষমতায় রাখার সেই চাণক্য নীতির ফলে ত্রিপুরায় বামবিরুধী শক্তির ভীতটাই ভেঙে চুরমার করে দেয়া হয়েছিল ।

বিজেপি ও সুনীল দেওধর সেটা ওনার 4 বছরের সময় সীমায় হাড়ে হাড়ে টের পেয়েগিয়েছিলেন । যদি আমরা 2013 এর নির্বাচনের পরিসংখ্যান লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পেইযে 22 টি বিধানসভা আসন 200 থেকে 2100 ভোটের ব্যবধানে জয় পরাজয় নিধারিত হয়েছে ।
তাই যদি কেউ বলে যে ত্রিপুরা বামরাজনীতির ঘর তাহলে পরিসংখ্যান দিয়ে বলা যায় সেটা একটা ভুল । যদি কেন্দ্র ও বাম রাজনীতির ফলে সরকার থাকা সত্তেও কোন রাজ্যে এত পরিমান বামবিরোধী ভোট পরেথাকে তাহলে ক্ষমতায় থাকতে ক্ষমতাসীন রাজনীতিক দল নানা পন্থা অবলম্বন করতে পারেন । আমার নানা মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম যে বরাবরই রেগিং পন্থা অবলম্বন করেছে বামরা , নাম জানাতে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কেডার নিজেই বললেন যে কি ভাবে কি কি পন্থা অবলম্বন করে রেগিং করেছে নানা সময়ে । যদি বামফ্রন্ট এর ঘর হয়ে থাকে তাহলে কেন কোন রাজনৈতিক দলের রেগিং করার প্রযোজনিয়াটা পরে ?
সুনীল দেওধর কিন্তু বামবিরোধী ভোটকে ধীরে ধীরে ভোটের মুখে এক করে নিচ্ছেন, যেটা 1993 যে টুকরো টুকরো হয়েগিয়েছিলো । তাছাড়া গত কয়েকমাস সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম যে সাধারণ মানুষ যারা বামপন্থী দল করে এসেছে বছরের পর বছর তারাও কিন্তু পরিবর্তন চাইছে । ত্রিপুরার মানুষের মধ্যে বরাবর একটা ভয় দেখতে পেতাম বামপন্থী বা বামপন্থী নেতাদের বিরুধ্যে কিছু বলতে সাহস করতো না বা করে না তবে 2018 এর নির্বাচনের আগে মানুষ কে মুখ খুলতে দেখছি দোকানে , অটো যে , চায়ের দোকানে । তাহলে কি এবার ত্রিপুরায় বামবিরোধী ভোটের বিভাজন হচ্ছে না ?
আশাকরি সেটা এবার হচ্ছেই না এবার ।
সঙ্গে রয়েছে অজস্র অভিমান , আজ সরকারি চাকুরীজীবীরা 4 pay কমিশন এ পরে আছে যেখানে সারা ভারত 7 pay commission এ চলে গেছে । 10300+ কেডার কে যে বামফ্রন্ট করার ফল হিসাবে চাকরি দেয়া হয়েছিল সেটা টিকিয়ে রাখতে পারে নি । সঙ্গে জোরালো আরো 12000 চাকরি । মোদি সরকারের নীতি নিয়ে যতই বিরোধিতা করুক নিজের ছোট্ট রাজ্যে যেখানে মাত্র 37 লক্ষ্য মানুষের বাস সেখানে যদি 7 লক্ষ্য বেকার থাকে সেই সরকারের বিরোধ্যে মানুষ তাদের অভিমত দেবেই তাতে দ্বিতীয় কোন আশা করা যায়না, যদিনা তাদের ভয় ভীতির দ্বারা চুপকরানো না হয়ে থাকে ।

বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী সম্প্রদায়ের লোককে সদাই বৈমাত্রিক আচরণ করেগেছে বামরাজনীতিকরা যদিও এতদিন এই সম্প্রদায়ের 75% ভোটে বামদের পক্ষ্যে ছিল বিমল সিনহাএর রাজনীতির কারণে আজ যদিও তিনি নেই তবে একটা পরিসংখ্যান বলছে বিজেপি উত্তর ত্রিপুরায় নিজের শক্ত ঘাঁটি খুঁজে পেয়েছে এই বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়ের ধীরে ধীরে বিজেপি এর দিকে হেলে যাওয়া , আশাকরি বিজেপি তাদের এই সমর্থন কে যথাযথ মর্যাদা ওর সম্মান দেবে যেটা বামরাজত্বে বরাবর অবহেলিত ।

বামরাজনীতি যে বেকার সমস্যার মুলকারণ সেটা হয়তো সেই 10300 কেডার যারা চাকরি খুইয়ে বুঝতে পেরেছেন সেইরূপ সাধারণ মানুষও যদি বুঝতে পারে তাহলে কিন্তু বামরাজনীতির সমস্যার দিন চলে আসছে ধরেনিতেইহবে । বামদের নীতি সর্বদাই বানিজ্যকরণের বিরোধিতা করা , বানিজ্যকরণ না করলে সরকারের কাছে বেকারদের বোঝা তা বেড়ে যায় , জানি না বামপন্থীরা সেটা বুঝে বানিজ্যকরণের বিরোধিতা করেন কিনা। কারণ বানিজ্যকরণ না করলে বেকার দের চাকরির সম্পূর্ণ দায়িত্ত সরকারের উপর চলে আসে , আর যদি সরকারে বামপন্থী রাজনীতি চলে যায় তাহলে বেকারদের বামপন্থী বানাতে বিশেষ অসুবিধা হয়না CPM এর রাজনীতিক পার্টি কে , কারণ চাকরির জন্য তো তাদের কে বামফ্রন্টমুখী হইতেই হয় , যার ফলে বামরাজনীতিক দল শক্তিশালী হয় কিন্তু সঠিক সময়ে বেকারদের চাকরি হয় কিনা সেটা 10300+ চাকরি হারা বা 12000 চাকরি হারা লোকেই বলতে পারবেন ভালো করে ।

নানা আর্থিক কেলেঙ্কারি , নারী নির্যাতন , সাধু আধিকারিকদের তাদের সঠিক সম্মান না দেয়া , অসাধু আধিকারিক দের বরাবর রাজনীতিক সমর্থন দেয়া , কিছু ভুগি বামপন্থী দের স্বার্থ সিদ্ধি আর অন্য সাধারণ বামপন্থী দের অবহেলা করা সব মিলিয়ে বামরাজনীতি কিন্তু অসুবিধাই পরেই আছে 2018 তে। তবে সবকিছুর উপরে জনগণ , বিজেপি যদি বামবিরোধী ভোটে কে এক করতে পারে , রেগিং কে নির্বাচন কমিশন আটকাতে পারে আর মানুষ যদি তার অভিমত ভয় শুন্য ভাবে ব্যক্ত করতে পারে , আধিকারিকরা যদি নিরপেক্ষ ভাবে নিজের নির্বাচনের কাজ করে দিতে পারেন তো আগামী দিনে হয়তো ত্রিপুরায় পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি ।